Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

জীবনের দাঁড়িকমা

পোস্ট করা হয়েছে জুন ৫, ২০২৪জুন ১৮, ২০২৪ by মুজিব হাসান

পারদ গলানো রুপোলি হাওড়ের বুকে বিকেলের সোনাঝরা রোদ জলকিরণের গালিচা পেতে দিয়েছে। এর ওপর দিয়ে তাগা লাগানো সুঁইয়ের মতো ঢেউ সেলাই করতে করতে এগিয়ে চলছে ছইঅলা ইঞ্জিনের নৌকাটি।বাতাসার মিষ্টতা নিয়ে বইছে হাওড়হাওয়া। জলজ ঘ্রাণে ভরিয়ে তুলছে মন। গলুইয়ে বসে জলজীবনের মুগ্ধকর দৃশ্যপট দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরছি।

চামটা হাওড় পেরিয়ে আমাদের বাড়ি। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে যেতে। এইটুকু পথ অথচ আমি বাড়ি ফিরছি আজ দুমাস পর। এটি আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে—বাড়ি থেকে যত দূরে থাকি, বাড়ির প্রতি পরানের টান থাকে বজ্র আঁটুনির মতো সুদৃঢ়; আর যত কাছেপিঠে থাকি, টান থাকে ফস্কা গেরোর মতো পলকা। আছাত্রজীবন এইঅভ্যাস নিয়ে থেকেছি। এখন যে জীবন, এর দাঁড়িপাল্লায় সেই টানের পরিমাপ করলে বাড়ি-আলগার দিকে জোখ থাকবে বেশি। এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, ভাটিয়ালি পাড়াগেঁয়ে জীবনযাপনের চেয়ে শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ততার ব্যাপারটি আমার মধ্যে প্রবল হয়ে উঠেছে। এভাবে আমাদের জীবনের পালাবদলগুলোখুব গোপনে, মনের অগোচরে ঘটে যায়—আমরা সেগুলো ঠাওর করতে পারি না।

জলকিরণের গালিচা মাড়িয়ে এগিয়ে চলছে নৌকা। সামনে আমার মায়ায় মোড়ানো কাজল গ্রাম। সেদিকে তাকিয়ে হাওড় হাওয়ার কানে কানে এই প্রশ্নটি রাখলাম—ভাটিয়ালি পাড়াগেঁয়ে জীবনযাপনের প্রতি সত্যিই কি আমার নিস্পৃহতা চলে এসেছে? ভাবনার হাওড়ে ডুব দিয়ে পেলাম কাদামাটির গন্ধ। পলির ভেতর থেকে বুদ্বুদ ওঠার মতো উঠে এলো একথাটি—আমি হাওড়ের ছেলে; হাওড়ের জল-ডাঙার বাহারি চিত্রপটে মেলেছে আমার চেতনার রংধনু। জীবনানন্দ দাশের মতো বলতে ইচ্ছে করে—হাওড়ের জল থেকে আমি পেয়েছি আমার শরীর। এই জলজীবনের মোহন কি এত সহজে ভুলে যেতে পারব?

বেশ মনে আছে, লেখাপড়ার সুবাদে পাড়াগাঁয়ের পরিবেশ ছেড়ে যখন শহরে এলাম, তখন সহপাঠীদের অনেকেই আমাকে ইয়ারকি করে ‘ভাইট্টে’ বলে ডাকত; এখনো বন্ধুমহলের কেউ কেউ মজা করে এমনটি ডেকে থাকে। যারা আমাকে এভাবে ডাকত, তাদের প্রতি পাল্টা ঢিল ছুঁড়ে বলতাম, ‘শোনো, আমারে ভাইট্টে বলবা না!’ জিজ্ঞেস করত, ‘ভাডির থেইক্কে উইট্টে আইছ, ভাইট্টে কইতাম না তে কিতা কইতাম?’ স্মিতমুখে বলতাম, ‘মুলকে ভাটির সন্তান বলবা; হাওড়ের বরপুত্রও বলতে পারো।’ আমার কথায় অনেকেই হাসির তুবড়ি ছোটাত। কিন্তু আমি মুখমণ্ডল দীপ্ত করে রাখতাম। হৃদয়ের কথাটি বলতে পারায় দারুণ প্রাণোচ্ছল লাগত।

হ্যাঁ, আমি ভাটি মুলকের সন্তান, হাওড়ের বরপুত্র। ভাটিয়ালি জলমহালের জীবনে বাধা পড়ে আছে আমার মন। ভরা বর্ষার হাওড়ে যেদিকে তাকাই, দেখতে পাই স্রোতের টানে ভেসে চলা পানিকোলার ঝাড়ের সঙ্গে ভেসে যায় আমার থইথই জলশৈশব। শুকনা মরসুমে দিগন্তছেঁড়া ফসলি মাঠের যেদিকে তাকাই, দেখতে পাই ধানখেতের কাঁচা মৌতাতমাখা দখিনা হাওয়ায় দোলায়িত সবুজে আন্দোলিত হয় আমার দুরন্ত কৈশোর। এই পাড়ভাঙা ধনু গাং, ঢালু পাড়ের ঘোড়াউত্রা নদী, গাঙের পেট কেটে বয়ে চলা বেড়া খাল, মাঠের বুক ছিঁড়ে ভেসে ওঠা আগলপা বিল, হিজল, করচ ও নল-খাগড়ার রাংসা বন, হদ্দুরপুর বন্দের মান্ধাতা হিজল গাছ, তিন মোহনা কাটাখালের গুদারাঘাট আর শিমুলবাঁক, নয়াপাড়া ও বড়িবাড়ি গ্রামে গেঁথে আছে আমার অস্তিত্বের শেকড়।এখানেই আমার রাজত্ব। এসব ছেড়ে আমি কীভাবে শহরবাসে যাব?

ঢেউখেলানো হাওড়ের দিকে ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ নৌকার খুব কাছ দিয়ে উড়ে গেল একটি দলছুট পানকৌড়ি। বাতাসের শনশন, ঢেউয়ের কলকল আর ইঞ্জিনের ভটভট আওয়াজ ছাপিয়ে আমার কানে লাগল পাখিটির ডানা ঝাপটানোর শব্দ। মুগ্ধ চোখে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলাম তার উড়ালপথের দিকে। হাওড়ের ঢেউ ছুঁয়ে উড়ে চলছে পাখিটি। কী সুন্দর ছুট! কী দারুণ পাখসাট! পাখিটি উড়তে উড়তে অদূরের জলমগ্ন বাঁশের খুঁটিটির মাথায় গিয়ে বসল। ধ্যানী চোখে তাকিয়ে রইল পানির দিকে, শিকার ধরার আশায়। এই দলছুট পানকৌড়ির জলজীবন দেখে মনজানালায় ভেসে উঠল আব্বার মুখ।

আমার আব্বাও হাওড়ের বরপুত্র। জলমহালের জীবনে আমাদের সংসার-নৌকার মাঝি তিনি। তার একহাতে হালের বইঠা, আরেক হাতে পালের দড়ি। উন্মত্ত হাওড়ে বিপুল উদ্যমে আমাদের নিয়ে তিনি বাইচালি করে চলছেন। আমি বড় ছেলে।আব্বা জানেন, এই অকূল সাগরময় হাওড়ে সংসার-নৌকা বাওয়ার মতো শক্তি আমার নেই। তাই তিনি নৌকাটিকে পাড়ে ভিড়াতে চান। জলমহালের জীবন ছেড়ে আসতে চান শহরে। আব্বার এই অভিপ্রায় আমাকে খুব ভাবিত করে। হাওড়ের জলমহালে বাইচালি করতে করতে তিনি বড্ড ক্লান্ত। তার এখন জিরানো দরকার। কিন্তু আমি কি পারব আব্বাকে এই স্বস্তিটুকু দিতে?

কাজল গ্রামের রেখাটি সবুজ হয়ে উঠছে। গ্রামের কাছাকাছি এসে পড়ছে নৌকা। দিগন্তের দিকে গুটিয়ে যাচ্ছে বিকেল। হাওড় হাওয়ায় ফুসফুস ভরে দম নিতে গিয়ে পেয়ে গেলাম ভাবনার খোরাক। তখনই ডায়েরি মেললাম। লেখালেখির সুবাদে আজকাল জীবন নিয়ে প্রায়ই ভাবিত হই। এসময়ে আমি যেহেতু রকমারি গদ্যশীলন করছি, তাই জীবনপাঠের কথাটি এই আন্দাজে লিখে রাখলাম—

মানুষের জীবন গদ্যের ফর্মার মতো, যার ধরন হয় লেখকের ভাবনা-বিন্যাস অনুযায়ী।একে একশ্বাসে পড়ে শেষ করা যায় না; এখানে মানতে হয় ব্যাকরণের নিয়ম, বিরামচিহ্নের সঠিক ব্যবহার। জীবনগদ্যের বিরামচিহ্নগুলো নানা অনুষঙ্গ ও উপলক্ষ্য নিয়ে আমাদের সামনে আসে। সেগুলোকে যথানিয়মে মেনে চালিয়ে যেতে হয় জীবনের পাঠ।

গ্রামের কাছারিঘাটে নৌকা ভিড়ল। সবার আগে নামলাম আমি। জীবনের দাঁড়িকমার হিসাব কষতে কষতে হাঁটা দিলাম বাড়ির দিকে। জামে মসজিদের পেছনে আমাদের বাড়ি। উঠানে পৌঁছতেই দেখি, রান্নাঘরের কাছে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আম্মা। তার হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে ভুলে গেলাম আঙুলের গিঁট ধরে হিসাব কষতে থাকা জীবনের দাঁড়িকমাগুলো।

মন্তব্য করুন

আরও লেখা :

  • ঢাকাবাসের এক বছর

    ঢাকাবাসের এক বছর

    আমার ঢাকাবাসের এক বছ...
  • যখন মাসের শেষ

    যখন মাসের শেষ

    মাসের বিশ তারিখের পর...
  • গুলিস্তানের পথমুখ

    গুলিস্তানের পথমুখ

    রামপুরা থেকে কদমতলি ...
  • আফালের দিনে

    আফালের দিনে

    রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের ন...
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান