Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

ফেলে আসা জন্মভিটে

পোস্ট করা হয়েছে জুন ১৮, ২০২৪ by মুজিব হাসান

বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাং দেখছিলাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ পানির ঢেউখেলানো এই নাব্য গাং; নাম তার ধনু—ময়মনসিংহ গীতিকায় যার বর্ণনা আছে। দিনমান তাতে চলাচল করে ডিঙি নাও, ট্রলার, লঞ্চ-কার্গো আর স্টিল বডির নৌকা। বাড়ির পেছনে দাঁড়ালে এ সব দেখা যায়। এমনকি ঘরে বসে শোনা যায় ট্রলারের ভটভট শব্দ আর লঞ্চ-কার্গোর দূরবর্তী সংকেত।

এই মুহূর্তে গাং দিয়ে একটা বিশাল কার্গো চলে গেল—বিকট সাইরেন হেঁকে। ওটা দেখার জন্য ছুটে এলাম এখানে। শিশুসুলভ কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। মুগ্ধ হলাম দারুণ। কার্গোটা দেখতে অবিকল আমার খেলনা-লঞ্চটার মতো। নয়াগাঁওয়ের বান্নি থেকে আব্বা আমাকে যেটা কিনে দিয়েছিলেন—প্লাস্টিকের চমৎকার লঞ্চ। দেখতে যেমন সুন্দর, এটা নিয়ে খেলতেও তেমন মজা। কিন্তু অবাক লাগল, আমার সেই খেলনা-লঞ্চটার মতো এত বড় একটা কার্গো গাং দিয়ে কীভাবে চলছে—পানির ওপর দৌড়ে দৌড়ে; এর মধ্যে আবার মানুষও আছে!

এমন ভাবনায় বিভোর ছিলাম। হঠাৎ করে আমার পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠল। প্রচণ্ড ভয় পেলাম। এক দৌড়ে চলে গেলাম মাঝঘরে। আম্মাকে জড়িয়ে ধরলাম। বুকটা তখনো ধুকপুক করছে। আমার কাণ্ড দেখে আম্মা ভয়ার্ত গলায় বলে উঠলেন, ‘এই অনিক, কিতা অইছে তর? এ্যামনে কাঁপতাছস ক্যারে?’

আমি ভয়কাতর গলায় বললাম, ‘আম্মা, বাড়ি পিছের মাডি কাঁপতাছে!’

আম্মা তখনই আমাকে কোলে নিয়ে সেখানে গেলেন। ঠিক সেসময় আমার চোখের সামনে রান্নাঘর-লাগোয়া পাড়ের মস্ত মাটির ডেলাটা ভেঙে পড়ল নিচে—গাঙের পানিতে। ধপাস শব্দ হলো। আমি আবারও প্রচণ্ড ভয়ে আম্মার গলা জড়িয়ে ধরলাম। আম্মা স্মিতমুখে বললেন, ‘বেক্কল, ডরাস ক্যারে? দইর পড়সে!’

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলাম—একটু আগে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, ওটা ভেঙে পড়ে গেছে গাঙের পানিতে। এখন এই ভাঙন আর আমাদের রান্নাঘরের মাঝে একহাত ব্যবধান। যেকোনো মুহূর্তে রান্নাঘরটাও ভেঙে পড়তে পারে। এরপর বড়ঘরটা। তারপরই সব শেষ। নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাবে আমাদের চৌদ্দপুরুষের ভিটেবাড়ি।

‘মা-ফুত এহানে খাড়ইয়া কিতা করো?’

আমি আর আম্মা রান্নাঘরের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় দাদু এসে বললেন এ কথা। দাদুকে দেখে আম্মা বললেন, ‘মায়া, অনিক দইর ভাঙা দেইখ্যা ডরাইছে।’

দাদু কিছুটা উষ্মামাখা গলায় বললেন, ‘তুমি এরে এহানে লইয়া আইছ ক্যারে? এমনেই যে বালা-মসিবত আইতাছে…’ বলে দাদু রান্নাঘরের দিকে তাকালেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘আল্লা জানে, কোম্বালা রান্দাঘরটা পইড়ে বড়ঘরটাও যায় গা গাঙের তলাত!’

সেদিন রাতে আমরা আগলাঘরে ঘুমিয়েছিলাম। সকালবেলা উঠে দেখি ভয়ানক কাণ্ড। আমাদের রান্নাঘরটা পড়ে বড়ঘরেরও অনেকটা ভিটে পড়ে গেছে নদীর ভাঙনে। পশ্চিম দিকের টিনের বেড়াটা ঝুলে আছে। এদিকের বেশ কটা খালি মটকা আর হাঁড়িকুড়ি পড়ে গেছে নিচে—গাঙের পানিতে। দেখি দাদা-দাদু, আব্বা ও চাচারা সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত। ভাঙাঘরের ছড়ানো-ছিটানো জিনিসপত্র কুড়িয়ে একত্র করছেন। কারও মুখেই রা সরছে না। সবার চোখেমুখে গভীর বেদনার ছাপ স্পষ্ট। এই বেদনা চরম দুঃখবোধের। চৌদ্দপুরুষের ভিটেবাড়ি হারানোর সীমাহীন মনোবেদনা।

একটু পরে দেখি বাড়ির সামনে একটা বড় নৌকা এসে ভিড়ল। আব্বা ও চাচারা মিলে গোলার ধান বস্তায় ভরে সেখানে ফেলতে লাগলেন। দাদা-দাদু ও বড় ফুফু মিলে ঘরের জিনিসপত্র, হাড়ি-পাতিল সব আরেকটা ডিঙি নাওয়ে তুলছেন। তখন দাদা আম্মাকে ডেকে বললেন, ‘অ অনিকের মা, এরারে লইয়া নাওঅ উড গা!’

আম্মা আমাকে নিয়ে নৌকায় উঠলেন, সঙ্গে ছোট বোন আনিকা। বড় ফুফুর ছেলেমেয়ে—সরমিন আপা, বাবন আপা, বাবলু ও তৃপ্তি। হাতের কাজ শেষ করে দাদু ও ফুফুও এসে আমাদের সঙ্গে নৌকায় উঠলেন। দাদা থেকে গেলেন ধানের নৌকায়, আব্বা ও চাচাদের সঙ্গে। একটু পরে সবকিছু নিয়ে চলে যাবেন গাঙের ওপারে—এখন আমরা যেখানে যাচ্ছি। সেখানে আমাদের নতুন বাড়ি।

শিমুলবাঁকের বাড়িঘরের দুরাবস্থা দেখে আমার বুদ্ধিমতি দাদু আগেই সেখানে জায়গা কিনে রেখেছিলেন। একেবারে ভিটেটিটে করে সব ঠিকঠাক। নদীর ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে আমরা চলে এলাম গাঙের এপারে। নতুন ভিটেয় নতুন ঘর তুললাম। পাশাপাশি তিনটা। একটা আমাদের, একটা দাদার, আরেকটা বড় ফুফুর। এখানেই বাস করতে লাগলাম—শিমুলবাঁকের ঐতিহ্যবাহী ভূঁইয়াবাড়ি থেকে বাস্তুহারা হয়ে।

ওই বাড়ি ছিল আমার জন্মভিটে। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে ওই বাড়িতে জন্মেছিলাম আমি। সেখানে কেটেছে আমার হাসি-কান্না আর বিস্ময়ভরা শৈশবের দিনগুলো। নদীর ভাঙনে আজ যা হারিয়ে গেছে গহিন গাঙের অতলে। কিন্তু আমার মনের আয়নায় এখনো ঝকঝক করে ওই বাড়ির চিত্রপট। স্পষ্ট হয়ে ভাসে এর ছবিগুলো। চোখ বন্ধ করে সেই আয়নায় তাকালে দেখতে পাই—হাঁটি হাঁটি পা পা করে একটি শিশু এগিয়ে আসে গাঙের পাড়ে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে গাং দেখে। হঠাৎ করে কেঁপে ওঠে ওর পায়ের নিচের মাটি। তারপরই সব ঝাপসা হয়ে আসে।

মন্তব্য করুন

আরও লেখা :

  • মোহন সন্ধ্যার সাহিত্...

    মোহন সন্ধ্যার সাহিত্...

    জলধোয়া আয়নার মতো শরত...
  • ডায়েরির দাগগুলো

    ডায়েরির দাগগুলো

    আমি তখন পনেরো পেরোনো...
  • আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃ...

    আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃ...

    শীতের সকাল। আকাশের জ...
  • পাঠ্যবইয়ের আমোদ

    পাঠ্যবইয়ের আমোদ

    বই পড়া নিয়ে যখন স্মৃ...
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান