Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

পাঠ্যবইয়ের আমোদ

পোস্ট করা হয়েছে জুন ২০, ২০২৪ by মুজিব হাসান

বই পড়া নিয়ে যখন স্মৃতি রোমন্থন করি, মনের গহিন থেকে উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে উঠে আসে ‘শিশুছন্দ’ বইটির কথা। আমাদের বাল্যশিক্ষার সময়ে এটি ছিল মাদরাসার শিশু শ্রেণির পাঠ্য। এই বই থেকে নিয়েছি ছন্দোময় নীতিকথায় বাংলা বর্ণপরিচয়ের আমোদিত পাঠ। পড়ার সময় নীতিকথার পঙক্তিগুলো মনে খুব দাগ কাটত, ছন্দের দোলা জাগিয়ে তোলত অপূর্ব মোহন। প্রতিটি বর্ণ ও বাক্যে মাখা থাকত মুগ্ধতার মৌতাত।

বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় ছিল অভিনব চমক—কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আল্লাহর নামে বীজ বুনেছি’ কবিতাটি, সংক্ষেপিত রূপে। এই কবিতার প্রতি আমার ছিল তুমুল ভালোবাসা। এটি যতবার পড়তাম, প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসে যেতাম মুগ্ধতার মোহনায়। সেই উচ্ছ্বাস এখনো অনুভব করি মননে ও মরমে।

মক্তব আওয়ালের পাঠ্য বাংলা বইটি ছিল ‘আমার প্রথম পাঠ’। এই বই আমার সামনে খুলে দিল শব্দপ্রেমের মোহন দিগন্ত—যেখানে শব্দরা উড়ে বেড়ায় রংধনুর রেখায়, মেঘের আল্পনায়। তখন নিজে নিজে পড়তে শিখেছি, রূপকথারা অক্ষরের আদলে দৃশ্যমান হতে লাগল বইয়ের পাতায়। শব্দের সঙ্গে হয়ে গেল আমার প্রথম প্রেম। চিরচেনা শব্দগুলোর আনকোরা রূপ আমাকে অভিভূত করল।

ভ্রমর ও ভোর—শব্দ দুটোকে এ নামে চিনতাম; এবার চিনলাম নতুন নামে—অলি ও উষা। বাল্যশিক্ষার বয়সে এভাবে হৃদয়ে সেঁটে গেল শব্দপ্রেমের চিরন্তন সিলমোহর। এখনো যখন কোনো শব্দকে নতুন নামে চিনি, প্রেম ও পুলকের মিশেলে টুকে রাখি বোধের চিহ্নপত্রে। শব্দের এই খোলস ভাঙার খেলা—বোধ করি—আমাকে আবেশিত করে রাখবে আ(লেখক)জীবন।

মক্তব দুওম থেকে পাঞ্জমের পাঠ্য বাংলা বইগুলো ছিল আমার সাহিত্য পাঠের পটভূমি। বস্তুত বলতে চাই, পাঠ্যবইয়ের সাহিত্য পড়ে সাহিত্য শেখা যায় না, এ বিষয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায় মাত্র। আমারও হলো এমন অবস্থা। তখনো সাহিত্যের সংজ্ঞা জানি না, কিন্তু পাঠ্যবইয়ের গল্প-কবিতাগুলো পড়ে অপার মুগ্ধ হই এবং নিজের অজান্তে ঋদ্ধ হতে থাকি। কোনো শিক্ষণীয় গল্প বা জীবনগঠনমূলক রচনা পড়লে ভেতরে ভাবাবেগ তৈরি হয়, কিছু একটা করার বাসনায় অনুভব হয় প্রগাঢ়।

মক্তব সুওমের বছর একদিন এ অনুভবের স্ফুরণ ঘটল। একটি গল্প পড়ার পর এমন ভাবাবেগ তৈরি হলো, আঙুলের বেড়ে উঠে এলো কলম; যাপিত জীবন চোখের সামনে মেলে ধরল কল্পনার তেপান্তর—গল্প লেখার প্লট। নানাবাড়ি বেড়ানোর নস্টালজিয়া থেকে লিখে ফেললাম জীবনের প্রথম লেখাটি।

মাদরাসার বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতাগুলো ছিল একটি ধারা ও ঘরানায় অন্তর্ভুক্ত ও সন্নিবেশিত। তখনো পর্যন্ত আমার সাহিত্য পাঠ ছিল একমুখী। এটা সর্বত সত্য, সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রে একমুখী না হয়ে হতে হয় বহুমুখী। আমার তখন মননে-চেতনে সবসময় কাজ করে পাঠের উদ্যম, সাহিত্যের আমোদ।

এবার স্কুলের বাংলা বইগুলো পড়ার ইচ্ছে জাগল। ভাইবোন এবং পাড়ার যারা স্কুলে পড়ত, তাদের বইগুলো নিয়ে পড়া শুরু করলাম। পর্যায়ক্রমে ক্লাস ওয়ান থেকে টেনের প্রতিটি বাংলা বই আমার পড়া হয়ে গেল। ক্লাস সেভেনের বাংলা বইয়ে কবি আল মাহমুদের ‘নোলক’ কবিতাটি পড়ে হৃদয়ে দারুণ ভাবাবেগ তৈরি হলো। এখনো পর্যন্ত আমার পড়া কবিতার মধ্যে এটি অনন্য ও পরম প্রিয় কবিতা। পরে জেনেছি, আল মাহমুদের কাছে নিজের লেখা কবিতার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় কবিতা ছিল নোলক।

এভাবে স্কুলের বাংলা বইগুলো থেকে পেলাম ধ্রুপদী সাহিত্যের পাঠ। প্রতিটি লেখাকে মনে হলো শিল্পিত ও নান্দনিক—যা আমার সাহিত্য পাঠের আমোদকে প্রাণবন্ত করল। অনেক পরে এ বিষয়ে একটি সনদ পেলাম প্রিয় লেখক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীনের জবানে। এক সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হলো, কেউ যদি অল্প সময়ে ভালো সাহিত্য পড়তে চায়, তাহলে তাকে কোন বইগুলো পড়ার পরামর্শ দেবেন? তার উত্তর ছিল, এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, স্কুলের ক্লাস ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত পাঠ্য বাংলা বইগুলো পড়ে নেওয়া। কারণ দেশসেরা লেখক ও সাহিত্যিকদের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলো এখানে অন্তর্ভুক্ত ও সন্নিবেশিত হয়েছে। কাজেই আমার বিচারে এই বইগুলোতে বাংলা সাহিত্যের ভালো রসদ রয়েছে।

তখনো পর্যন্ত সাহিত্য বিষয়ক কোনো বইপত্র আমার হাতে আসেনি। সাগরের ফালি হাওড়ের ছেঁড়া দ্বীপের মতো পাড়াগাঁয়ে স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবই আর তাবলিগ ও মাস্তুরাত জামাতের তালিমের বই-কিতাব ছাড়া আর কোনো আউট বই পড়ার চল ছিল না—পাঠাগার বা লাইব্রেরি ছিল স্বপ্নের মতো ব্যাপার। সেই দিকদর্শীহীন সময়ে পাঠ্যবইয়ের সাহিত্য পাঠগুলো আমাকে উদ্দীপ্ত ও আমোদিত করল।

সেসময় মক্তব পাঞ্জমের বেফাক পরীক্ষা দিতে কিশোরগঞ্জ গেলাম। জামিয়া ইমদাদিয়া লাগোয়া জেলা পাবলিক লাইব্রেরি। একদিন সেখানে কৌতূহল নিয়ে ঢুকে পেয়ে গেলাম গুপ্তধনের সন্ধান। সাহিত্যের মলাটবদ্ধ বইপত্র ছুঁয়ে দেখলাম। যে কদিন ছিলাম, নিদারুণ তিয়াস নিয়ে পড়লাম নানাধর্মী বইপত্র; কিন্তু পাঠের আশ মিটল না কিছুতেই।

সেই তিয়াসি সময়ে আশের গ্লাস হিসেবে হাতে পেলাম ‘সাহিত্যের ক্লাস’ বইটি—প্রচ্ছদ শ্লোগানের মতো যা আমাকে দেখিয়েছে সাহিত্যের পথ। কীভাবে? এ গল্পটি তোলা রইল। বলব অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে।

মন্তব্য করুন

আরও লেখা :

  • মোহন সন্ধ্যার সাহিত্...

    মোহন সন্ধ্যার সাহিত্...

    জলধোয়া আয়নার মতো শরত...
  • ডায়েরির দাগগুলো

    ডায়েরির দাগগুলো

    আমি তখন পনেরো পেরোনো...
  • আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃ...

    আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃ...

    শীতের সকাল। আকাশের জ...
  • যে স্মৃতি জল-বাতাসার

    যে স্মৃতি জল-বাতাসার

    মাদরাসাজীবন। জীবনের ...
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান