মানুষের জিহ্বা এক মারাত্মক অস্ত্র। এর আঘাত যেকোনো ধাতব অস্ত্রের চেয়ে সাংঘাতিক। এটা শরীরে লাগে না, কিন্তু হৃদয়কে এমনভাবে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়, যা কাউকে দেখানো যায় না। প্রবাদে যেমন বলা হয়—
লাঠির আঘাতে রক্ত ঝরে, কথার আঘাতে প্রাণ নড়ে।
কথাটি ধ্রুব সত্য। লাঠির আঘাত দিনদুয়েক কিংবা সময়ের ব্যবধানে সেরে ওঠে, কিন্তু কথার আঘাত হৃদয়ে এমন রক্তক্ষরণ ঘটায়, যার ক্ষত তাৎক্ষণিক সারানো যায় না।
রাগ-খেদ বা কথা কাটাকাটির ঘটমান মুহূর্তটি খুব ছোট। উত্তেজনার সময় সব দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে, তারপর দপ করে কিংবা ধীরে ধীরে নিভে যায়। কিন্তু এর পরের মুহূর্তটি বিরাট আকার ধারণ করে আসে। তখনই সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া। এর আগুন ছাইচাপা হয়ে ধিকিধিকি করে জ্বলতে থাকে। ফলে অজান্তেই জীবন হয়ে যায় ছারখার।
এর শুরুটা হয় মুখের একটি কথা থেকে। কথাটি হয়তো সামান্য, অসামান্য বা মারাত্মক। যা আঘাতের ঢিল ছুড়তে অথবা হাসির তুবড়ি ছোটাতে বলা। মিষ্টি কথা শুনতে ভালো লাগে আর তিক্ত কথায় মন ভেঙে যায়। দুটোরই প্রতিকিয়া সুস্পষ্ট। কিন্তু আরেকটি কথা আছে, যা শুনতে মজার হলেও মারাত্মক আঘাত করে। একে বলে ‘মিছরির ছুরি।’
মিষ্টি কথায় তিক্ত আঘাত দেয়, সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই। কাছেপিঠের লোকজন এটা বেশি করে। যাদের সাথে নিত্য বসবাস, তারাই মিছরির ছুরিকাঘাতটা করে বারবার। এর প্রতিক্রিয়া হৃদয়ে প্রচণ্ড বিষক্রিয়া ঘটায়। চেহারা দেখে তারা সেটা আঁচ করতে পারে, তবুও সহানুভূতি দেখায় না। বেদনায় নীল মুখ দেখলে তাদের মনে আনন্দের সবুজ বাতি জ্বলে ওঠে। এমন মানুষগুলো কখনোই প্রিয়জন হতে পারে না।
মানুষের মন ভাঙা, কথা দিয়ে আঘাত করা খুবই নিন্দনীয় কাজ। এর কারণে বড় রকমের বিপর্যয় হতে পারে। তাই ইসলাম একে কোনোভাবে সমর্থন করে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—
প্রকৃত মুসলিম সে-ই, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। (সহিহুল বুখারি : ১০)