Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

যখন মাসের শেষ

পোস্ট করা হয়েছে জুন ২০, ২০২৪ by মুজিব হাসান

মাসের বিশ তারিখের পর থেকে বিবর্ণ হয়ে আসে প্রতিটি দিন। একটু একটু করে বিষণ্ণ হতে থাকে মন। যাপনের আনন্দ পরিণত হয় ঝরাপালকের বিস্বাদে। নিঃশব্দে ফেলা নিশ্বাসটুকুও হয়ে যায় হাহাকারের হাওয়া। তখন কেবল চোখের সামনে দেখতে পাই একটি ঝুলন্ত শেকল—যার আংটাগুলোতে ঝুলতে থাকে কতগুলো চিরকুট : বাসাভাড়া, খাবার বিল, মিলের বাজার, টুকটাক কেনাকাটা, যাতায়াত খরচ, ঋণ পরিশোধ, বাড়িতে টাকা পাঠানো এবং… এবং… ইত্যাদি।

শেষের দিনগুলো নিদারুণ টানাপোড়েনের মধ্যে কাটে। প্রায়দিনই নাস্তা করা হয় না। অফিসের সময় হলে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে যাই। হাঁটার দূরত্বে অফিস, তাই গাড়িভাড়ার চিন্তাটা লাগে না। অফিসে এসে এটেন্ডেন্স দিয়ে কিচেনে ঢুকি; নিজেই বানিয়ে নিই বরাদ্ধ চা-টা। খালিপেটে এককাপ চা ফেলে কাজে বসি। ঘণ্টা দেড়েক পরে আসে হালকা নাস্তা। এটা খেয়ে আবারও কাজে নিরত হই। এদিকে পেটের একপাশ থেকে বেলুনের মতো ফুলতে থাকে দুপুরি-ভোজের খিদে।

অফিস শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়। কিন্তু আমার বের হতে হতে সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে কোনোদিন থাকে রান্নার দায়িত্ব, কোনোদিন মিলের বাজার। সেদিন রান্না ও বাজার দুটোই পড়ে গেল আমার ভাগে। খালি হাতে কীভাবে বাজার করব? আর বাজার না হলে তো রান্নাও হবে না! বাসায় যারা আছে, সবারই একই দশা। অগত্যা এক সহকর্মীর থেকে ২০০ টাকা ধার নিতে হলো। এই টাকায় কী কী বাজার করা যায়—এটা ভাবতে ভাবতে বাসার দিকে হাঁটতে থাকি।

গলির মুখের মুদি দোকানটায় ঢুকি। পেছনে ফেলে আসি মেরাদিয়া কাঁচাবাজার। পথের দুপাশে দোকানিরা কী চমৎকার শাক-সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছে! আকাশছোঁয়া দামের কারণে মন চাইলেও কিছু কিনতে পারি না। ঠিক করি, আজ খিচুড়ি রাঁধব—কম টাকায় মজার খাবার। আতপ চালটা দেখিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞেস করি, ‘এই চাউলটা কত কেজি?’

‘৫৫ টাকা কেজি।’

‘আড়ইশো গ্রাম মসুর ডাল কত?’

‘৩৫ টাকা।’

‘মুগ ডাল আড়াইশো?’

‘৩৮ টাকা’।

‘আচ্ছা। এক কেজি পেঁয়াজ আর আড়াইশো রসুন দিয়েন।’

‘আর কিছু?’

‘ডিম দিয়েন একহালি।’

দোকানি সদাইগুলো একটি পলিথিনে ভরে মোট দামটা বলল, ‘২২৬ টাকা হইছে।’

আমার কাছে আছে ২০০ টাকা, ২৬ টাকা টান পড়েছে। ভেবে দেখি, ডিম একহালি না নিয়ে দুটো নিলেই হবে। তখনই মনে পড়ে আদা নেওয়া হয়নি। সাথে সাথে ব্যাগ হাতড়ে পেয়ে যাই খুচরো ১৫ টাকা। দোকানিকে বলি, ‘দুইটা ডিম রাইখা দেন। আর ১৫ টাকার আদা দিয়া দেন।’

বলতেই হয়, দোকানি সদয় হয়ে আদাটুকু দিয়েছে। নয়তো এই আক্রার বাজারে আদা আর জিরার যা দাম—গরুর মাংসের মতো এগুলোও সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে!

বাসার পাঁচতলার এক ইউনিটে থাকে চারজন সহকর্মী আর আমি থাকি ছাদের চিলেকোঠায়। রাতের খাবারটা তাদের সাথে হয়ে যায়; রান্নাও হয় তাদের কিচেনে। আমি এসে চাল-ডাল ধুয়ে খিচুড়ি বসিয়ে দিই। কাঁচামরিচ আনার টাকা ছিল না। একটি পলিথিনে পেয়ে যাই তিনটে মিয়ানো মরিচ। খিচুড়ির জন্য দুটো রেখে একটি দিয়ে দিই পেঁয়াজকুচির সাথে ডিমভাজির জন্য। ইচ্ছে ছিল দুটো ডিম ভেজে চারজনে ভাগ করে খাব। তখন এক সহকর্মী বদান্যতা দেখিয়ে আরও দুটো ডিম নিয়ে এলো। রাতের খাবারটা সারা হয়ে গেল খিচুড়ি আর ডিমভাজি দিয়ে।

খাওয়া-দাওয়ার পর চলে আসি আমার রুমে। সারাদিন দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় রুমটা গুমোট হয়ে ছিল। সব খুলে দিয়ে ছাদের কার্নিশে গিয়ে বসি। চোখে পড়ে আশপাশের বাসাগুলোর টুকরো টুকরো দৃশ্য। এক বাসার বেডরুমে দুজন বুড়োবুড়ি নতমুখে বসে আছেন। এক যুবক এসে তাদের সাথে কীসব কথাবার্তা বলল। একটু পরে এক যুবতী এসে বুড়ো লোকটিকে এককাপ চা দিল। লোকটি চা সামনে নিয়েও বসে রইলেন নতমুখে। আরেক বাসার কিচেনে এক নারী রান্না করছে। একটু পরপর এক পৌঢ় মহিলা এসে তাড়া দিচ্ছে তাকে। এক বাসায় ডাইনিং স্পেসে মনের আনন্দে খেলছে দুটি ছেলেমেয়ে। আরেক বাসায় সদ্য অফিস থেকে ফিরেছে এক লোক। ফ্যানের নিচে বসে হাঁপাচ্ছে। আরেক বাসার ব্যালকনিতে ল্যাপটপে বুঁদ হয়ে বসে আছে এক তরুণী।

ছাদের কার্নিশে বসে দেখছি এমন জীবনছবির সরাসরি সম্প্রচার। হঠাৎ মনে হলো, আমাকেও কি কেউ এভাবে দেখছে? অন্ধকারের মুখোমুখি বসে এক তরুণ দিনযাপনের টালিখাতা নিয়ে খরচের কড়চা করছে—এটা কি কেউ বুঝতে পারছে? এই মনে হওয়াকে মনে মনে উত্তর দিই—কী জানি!

সাথে সাথে বোধ আসে, এটা আমাদের একটি মানুষিক অভ্যাস—আমরা নিজের অতল দুঃখগুলো চেপে রাখি আর অন্যকে দুঃখ পেতে দেখলে এর কারণ জানতে চাই। বেদনায় নীল হয়ে আছি, এ সময় এসে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, ‘কী খবর! কেমন আছ?’ তখন ঠোঁটের কোণায় হাসির রেখাটি ধরে রেখে বলি, ‘এই তো, ভালো আছি!’ অথচ—

জীবনের সাথে রোজ খেলে যাই কানামাছি

ভালো নেই তবুও বলতে হয় ভালো আছি!

মন্তব্য করুন

আরও লেখা :

  • ঢাকাবাসের এক বছর

    ঢাকাবাসের এক বছর

    আমার ঢাকাবাসের এক বছ...
  • গুলিস্তানের পথমুখ

    গুলিস্তানের পথমুখ

    রামপুরা থেকে কদমতলি ...
  • আফালের দিনে

    আফালের দিনে

    রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের ন...
  • বন্ধুতার অমৃতে

    বন্ধুতার অমৃতে

    বন্দের নাম চন্দনা। উ...
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান