Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

যে স্মৃতি জল-বাতাসার

পোস্ট করা হয়েছে জুন ২০, ২০২৪জুন ২০, ২০২৪ by মুজিব হাসান

মাদরাসাজীবন। জীবনের খেলাঘরে সুখের বারান্দা। কারও চৌদ্দ বছর, কারও দেড় যুগ, কারও-বা আরও বেশি—আমরা বাস করি এই ঘরে, সংসার পাতি সুখের বারান্দায়। ফালি ফালি রোদ, টুকরো টুকরো ছায়া—মায়াময় এক সোনালি সংসার। মাথার ওপর ঝলমলে চাদোয়া। সেখানে জমা হয় যাপিত জীবনের নানারঙা স্মৃতি। সুখ-দুখের কানাকড়ি, হাসি-কান্নার হিরেপান্না, আনন্দ-বেদনার বর্ণিল গাথা। স্মৃতির ঝালর লাগানো রঙিন মখমলে দিন—যা কোনোদিন ভুলবার নয়।

আমার মাদরাসাজীবনের উজ্জ্বল সময়টা কেটেছে জামিয়া ইমদাদিয়ার ছায়াতলে, ভালোবাসার বাগে আতহারে। এখানে আমি সানুবি সালেস জামাতে ভর্তি হই। শহুরে পরিবেশের মাদরাসায় এ-ই আমার প্রথম আসা। তাই এরসঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়েছিল বইকি! যেকোনো মাদরাসায় নতুন ছাত্র হয়ে এলে সর্বপ্রথম যে সমস্যায় পড়তে হয়, তা হলো—নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার মনঃকষ্ট। এ ব্যাপারটা যারা জয় করে নিতে পারে, তারা হয়ে ওঠে থিতু জীবনচারী।

জামিয়া ইমদাদিয়ার নতুন পরিবেশে এসে আমার অবস্থাও এমন হয়েছিল। এত বড় মাদরাসা, কীভাবে কী করব! কিন্তু সুখের কথা হলো, আমি যে জামাতে ভর্তি হয়েছিলাম, সেখানে প্রায় অনেকেই ছিল আমার পূর্বপরিচিত। এ ব্যাপারটা মনে থাকায় সে কষ্ট আমাকে অতটা পোহাতে হইনি।

সে বছরের একটি উজ্জ্বল স্মৃতি মনে পড়ছে। বছর শুরুর প্রথম সপ্তাহে জামাতভিত্তিক সাপ্তাহিক বক্তৃতা অনুষ্ঠান হবে। আলোচ্য বিষয়—বানিয়ে জামিয়া মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর জীবন ও কর্ম। লেখালেখির অভ্যাস থাকায় এ বিষয়ে একটি লিখিত বক্তৃতা আমি নিজে তৈরি করে নিলাম—বানিয়ে জামিয়া রহ.-এর জীবনচরিত ‘হায়াতে আতহার’ ঘেঁটে। ডায়াসে দাঁড়িয়ে সে বক্তৃতাটি সংবাদ পাঠ করার মতো শুনিয়ে দিলাম সবাইকে। আমার বলার ভঙ্গিটি এত দ্রুত ও অকপট ছিল, শুনে সহপাঠীরা মিটিমিটি হাসছিল আর বিচারক মহোদয় মুফতি মোশাররফ সাহেব অবাক চোখে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে।

এর আগে আমি কোনোদিন বক্তৃতা দিইনি। তাই ফলাফলের ব্যাপারে ছিলাম নির্লিপ্ত। কিন্তু ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা গেল—আমি হয়েছি প্রথম। এটা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। জীবনের প্রথম বক্তৃতা অনুষ্ঠানে আমি হয়েছি প্রথম! তারপর আমার লেখালেখির কথা যখন ক্লাসজুড়ে প্রচারিত হলো, তখন সহপাঠীরা আমাকে নাম ধরে ডাকার বদলে ডাকতে শুরু করল ‘কবি’ সম্বোধনে।

সে বছরই জামিয়ার আল-আতহার সাহিত্য পাঠাগারের দেয়ালিকার কাজে সম্পৃক্ত হয়েছি। সেখানে মননশীল সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি সহপাঠী খাইরুল ইসলামকে। পাঠাগারের কাজকর্মে সে ছিল খুব আন্তরিক। মননশীলতার দিক দিয়ে তার অবস্থান সবসময় আমার কাছাকাছি থাকত। যে কারণে আমাদের দায়িত্ব পালনের সময়ে সাহিত্য পাঠাগারকে বেশ কিছু অনন্য কাজ উপহার দিতে পেরেছিলাম।

এর একটি হলো, আধুনিক (প্রিন্টিং) দেয়ালিকা—যেটি আমরা প্রথম প্রকাশ করেছিলাম; আরেকটি বানিয়ে জামিয়া মাওলানা আতহার আলী রহ.-এর ওপর একটি স্মারক—স্মৃতির আয়নায় দেখা প্রিয়মুখ। শাহ সাহেব হুজুর রহ. সম্পূর্ণ নিজের খরচে স্মারকটি ছাপিয়ে ছিলেন। ছাত্রত্বের বাঁধনে থেকেও এমন একটি মহান কাজ করতে পারায় আমাদেরকে দিয়েছিলেন হৃদয়জ দোয়া।

আল-আতহার সাহিত্য পাঠাগার-এর মুখপত্র ‘আল-আতহার’ দেয়ালিকা। এই দেয়ালিকার সঙ্গে মিশে আছে আমার জামিয়াজীবনের ঢের সুখস্মৃতি। কত বিনিদ্র রাত আর নির্ঘুম প্রহর কাটিয়েছি আল-আতহারকে সঙ্গ দিয়ে! দেয়ালিকার প্রতিটি কলামে, আঁকায় ও লেখায় বাঙময় হয়ে উঠত যেন আমারই হৃদয়ের কথামালা। সম্পাদনার পেছনে শ্রম দিতে গিয়ে দিনরাত এক হয়ে যেত।

আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টা থাকত, প্রতিটি দেয়ালিকাকে নান্দনিকতায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। যে জন্য প্রবন্ধ-নিবন্ধের পাশাপাশি সেখানে সাহিত্যের অন্যান্য বিষয়—অণুগল্প, ছোটগল্প, গদ্য কবিতা, রকমারি গদ্য, ফিচার, সাক্ষাৎকার, কৈফিয়ত প্রভৃতি স্থান পায়। এর জন্য ছাত্রদের ডেকে এনে আমরা তাদের এই বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিতাম। এতে করে মাঝেমধ্যে দারুণ সাহিত্যআড্ডাও জমে যেত।

দেয়ালিকার কাজ করতে গিয়ে লেখালেখির ধরন ও প্রকরণ সম্পর্কে মাথায় বেশ আইডিয়া জমছিল। সেগুলোর কিছু বাস্তবে রূপদানের ভাবনা থেকে জন্ম নিল পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছে। তখন আমি ফজিলত প্রথম বর্ষের ছাত্র। নানাধর্মী পত্রিকা-ম্যাগাজিন সম্পর্কে খোঁজখবর রাখি; সংগ্রহ করে পড়ি। সেসময় মাসিক নবধ্বনির একটি সংখ্যা—ঝুম সবুজের শ্রীমঙ্গল—ফেসবুকে বিজ্ঞাপন থেকে অর্ডার দিয়ে সংগ্রহ করি। এর আগে এই পত্রিকার বেশ কিছু পুরোনো সংখ্যা পাঠাগারে দেখেছিলাম। নবধ্বনির ঝলমলে প্রচ্ছদের সংখ্যাটি আমাদের দারুণ মন কাড়ে। মনের মাটিতে বপন করে দেয় পত্রিকা প্রকাশের বীজ।

আমাদের ছোট কাগজ ‘স্বপ্নকুঁড়ি’ সেই বীজেরই অঙ্কুর। এই অঙ্কুরটিকে উদ্গম করে যিনি কুঁড়িতে বিকশিত করেছেন, তিনি শ্রদ্ধেয় তানভীর এনায়েত ভাই। তার একান্ত পরিচর্যা আমাদেরকে স্বপ্নকুঁড়ির স্বাপ্নিক ও মালি করেছিল। তানভীর ভাই আমাদের বুকে খোদাই করে দিয়েছেন ‘ফুল হয়ে ফোটা’র অমীয় বচনটি—যেটিকে আমরা স্বপ্নকুঁড়ির শ্লোগান হিসেবে নিয়েছিলাম। এজন্য নবধ্বনি পত্রিকাটি এবং তানভীর এনায়েত ভাইয়ের প্রতি আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকব।

মাদরাসাজীবনের স্মৃতি মনে এলে আমার হৃদয়ে পটভূমি হিসেবে উদিত হয় প্রিয়ালয় জামিয়া ইমদাদিয়া। মনে হয় এটিই আমার জীবনের একমাত্র স্মৃতিমহল। নিজেকে গড়ার এবং প্রতিভা বিকাশের পুঁজিপাতি এখান থেকে সঞ্চয় করেছি। তাই জামিয়ার স্মৃতিগুলোর সঙ্গে অন্যসব স্মৃতির কোনো তুলনা চলে না। এগুলোর সবই বাতাসার মতো মিহি ও মিষ্ট স্মৃতি—যেগুলো মনে কোমল অনুভূতির স্বাদ দেয়!

মন্তব্য করুন

আরও লেখা :

  • মোহন সন্ধ্যার সাহিত্...

    মোহন সন্ধ্যার সাহিত্...

    জলধোয়া আয়নার মতো শরত...
  • ডায়েরির দাগগুলো

    ডায়েরির দাগগুলো

    আমি তখন পনেরো পেরোনো...
  • আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃ...

    আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃ...

    শীতের সকাল। আকাশের জ...
  • পাঠ্যবইয়ের আমোদ

    পাঠ্যবইয়ের আমোদ

    বই পড়া নিয়ে যখন স্মৃ...
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান