Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

বন্ধুতার অমৃতে

পোস্ট করা হয়েছে জুন ১৮, ২০২৪ by মুজিব হাসান

বন্দের নাম চন্দনা। উজানিয়া শ্যামলিমায় ছাওয়া এক টুকরো ফসলের মাঠ। বন্ধু তৌফিক আর সারোয়ারের সঙ্গে প্রথম যেদিন সেখানে যাই, এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমার দুচোখে মাখিয়ে দেয় মুগ্ধতার অঞ্জন। দারুণ দৃষ্টিতে দেখতে থাকি চারপাশের মনোরম পরিবেশ। দখিন হাওয়ার হিল্লোল, দোলায়িত সবুজের হাতছানি, প্রাণজীবনের আলোড়ন আর গ্রামীণ জীবনযাত্রার মঞ্চায়ন দেখে মুহূর্তের মধ্যে বিহ্বল হয়ে পড়ি। হৃদয়ে জিইয়ে রেখে দিই মুগ্ধতার অমিয় মোহন। এর টানে বিমোহিত প্রাণে দুই মানিকজোড় বন্ধুর সঙ্গে সেখানে ছুটে যেতাম প্রায় সময়।

সেদিন সারা দিন ধরে যাপনের আকাশে আনাগোনা করছিল মনখারাপের মেঘ। কিছু অব্যক্ত ও অসহনীয় ব্যথার তোড়ে নিদারুণ হাঁসফাঁস করছিলাম। নিঃশ্বাসে সজীবতা এবং হৃদয়ে প্রাণবন্ততা আনতে আন্ডারগ্রাউন্ডের বদ্ধ রুমটি ছেড়ে চলে গেলাম ইসলামিয়া সুপার মার্কেটে—তৌফিক আর সারোয়ারের কাছে। এ সময়ে তারাই আমার মনখারাপের মহৌষধ। তাদের কাছে গেলে, হাসিমুখে কথাবার্তা বললে মনে মনে বেশ স্বস্তি পাই। মার্কেটের কোলাহলমুখর পরিবেশে আমরা তিন বন্ধু মিলে কায়েম করে বসি মওজের মজমা। কথায় কথায়, হাসি-আড্ডায় ডগমগিয়ে উঠি আমুদেপনায়।

কিন্তু সেদিন দুপুরে মনের আকাশ খুব মেঘলা ছিল। ভার কাটছিল না কিছুতেই। এমন হলে তাদের সঙ্গে জীবনঘনিষ্ট কথাবার্তা বলি। এমন মনোভাব থেকে তৌফিককে উদ্দেশ্য করে পাড়লাম এ কথাটি—‘বলো তো, যদি জীবন থেকে পালানো যেত, তাহলে কোথায় যেত মানুষ?’ তার উত্তর, ‘জীবন থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। আমরা সবাই জীবনের জেলখানার কয়েদি।’ মাথা নাড়লাম, ‘হুম, ঠিকই বলেছ। জীবন পালাতে দেয় না। জীবন বড় নিষ্ঠুর, করে না ক্ষমা!’

আজকাল একলা হলে জীবন নিয়ে প্রায়ই ভাবিত হই। তখন চোখের সামনে কাঁচা মুদ্রার মতো নেচে ওঠে জীবন। ভাবনার প্রখরতায় দেখে নিই এর এপিঠ-ওপিঠ। যেন একটি পাঁচ টাকার কয়েন—যার এপিঠে শাপলার চাঁদা আর ওপিঠে যমুনা বহুমুখী সেতু। শাপলার সৌন্দর্যময়তা নিয়ে আমরা বাঁচতে চাই, উপভোগ করতে চাই জীবনকে; চাঁদার অঙ্কনে সাজাই জৈবনিক স্বপ্নগুলো, চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ করি। এভাবে পার করে দিই একটা সময়, একটা ধাপ; পাশ ফেরায় জীবনের এক পিঠ। এর সবটা থাকে কল্পনার আদল হয়ে—হয়তো অলীক কিংবা সম্ভাবনাময়।

পালাবদলের দ্বিতীয় পর্যায়ে সামনে আসে অপর পিঠটি। দেখি ঘটমান বাস্তবতার স্রোত নিয়ে বয়ে যায় উচ্ছল যমুনা, বুকের ওপর ধরে রাখে পারাপারের ব্যতিব্যস্ত সেতু। এখানে কোনো স্টেশন বা স্টপেজ নেই, নতুন রোডম্যাপ তৈরি করা কিংবা ইউটার্নের নেই কোনো সুযোগ; কেবলই চালিয়ে যেতে হয় যাতায়াত। স্বপ্নরা পুঞ্জীভূত মেঘ হয়ে লেপ্টে থাকে আকাশের কার্নিশে। মুগ্ধচোখে সেদিকে তাকিয়ে সয়ে যেতে হয় রূঢ় বাস্তবতার ঘাত-প্রতিঘাত।

তৌফিক আর সারোয়ার দুজনে বিবাহিত। তাদের জীবন নানা রঙে রঙিন। রঙিন জীবনের তাড়নাগুলো বেশি হয়ে থাকে, তাদেরও এমন। তাদের দিন শুরু হয় জীবিকার খোঁজে। দিনমান যেটুকু কামাই হয়, বেলাশেষে তা নিয়ে ফিরতে হয় বাড়িতে, পরিবারের কাছে। আমার এরকম হয় না। আমারও তাড়না আছে, আপাতত সেগুলো সাদাকালো। কিন্তু আমাদের জীবনবোধ একই।

জীবিকার খোঁজে-থাকা প্রতিটি মানুষের জীবনবোধ অভিন্ন, কেবল রূপরেখাগুলো স্বতন্ত্র। আর্থিক সংকট ও পারিবারিক দুরাবস্থায় পুরুষমাত্রই চিন্তিত ও বিচলিত হয়। এসব থেকে উত্তোরণের অন্যতম উপায় বিবেচনা করা হয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে। এই সমৃদ্ধির পথ একটি—কামাই-রোজগার। সবাই এই পথ ধরে এগিয়ে যায়।

উপার্জনের আনন্দ-বেদনায় সবার জীবনবোধ থাকে এক, কিন্তু এর রূপরেখাগুলো নৈতিক-অনৈতিকতার মোড় নিয়ে দুভাগ হয়ে যায়। এখান থেকে শুরু হয় স্বতন্ত্র পথচলা। নৈতিকতার পথে হাঁটতে গিয়ে কষ্ট-জর্জরিত হয়ে যায় অনেকের জীবন, মিলে সামান্য রোজগার। তবুও এই কষ্টার্জিত উপার্জনে পাওয়া যায় পরম শান্তি। অন্যদিকে অনৈতিকতার পথে চলে অনায়াসে অনেকের মিলে যায় কাড়ি কাড়ি অর্থ। কিন্তু এই অনায়াসলব্ধ উপার্জনে কোনো সুখ পাওয়া যায় না। জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ।

দিনমান এই ভাবনায় কেটে গেল। সন্ধ্যার পর সারোয়ারের কাছে গেলাম। তৌফিক তখন বাড়িতে চলে গেছে, রঘুখালি মসজিদে তারাবি পড়াবে। আমি পয়লা রমজান থেকে সেখানে তারাবি পড়ছি। ইশার আজানের সময় সারোর বাইকে করে চলে যাই, ফিরি তারাবি শেষে। এ সময়টায় খুব প্রাণবন্ততা পাই। যাওয়া-আসার পথে এলোমেলো বাতাস সব বেদনা মুছে নিয়ে যায়, মন করে ফুরফুরে।

এই মানিকজোড় বন্ধু দুজন চরম দুঃসময়ে আমাকে দারুণ সঙ্গ দিচ্ছে। ভার মন নিয়ে তাদের কাছে গেলে দীপিত মুখে ফিরে আসি। আমার প্রতি তারা সবসময় অপার আন্তরিক। দুঃসময়ের ভালোবাসাগুলো একেবারে নিঃস্বার্থ এবং সর্বত খাঁটি হয়ে থাকে, তাদের ভালোবাসাও এমন। মূলত মানুষের ভালোবাসাই পৃথিবীর ফুসফুস। এটা না থাকলে ধ্বংসের মচ্ছবে পড়ে কবেই বিলীন হয়ে যেত পৃথিবী!

সারো বাইক চালাচ্ছে চন্দনার পথে। চরাচরে কৃষ্ণপক্ষের রাত, নৈশিক নিজস্বতায় গাঢ় হচ্ছে অন্ধকার। দুপাশে পাকা পাকা ধানখেত, ছাড়া ছাড়া ঝোপঝাড়। সেদিকে তাকিয়ে আমি দারুণ অবাক : আলোর মিছিল নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে শত শত জোনাকি। মনে হচ্ছে আমরা যেন চলে এসেছি এক অপার্থিব মায়াময় জগতে।

মাথার ওপর মিটিমিটি আলোর শামিয়ানা। ঝিঁঝিঁর ডাকে মনে হচ্ছে স্বাগত দফ বাজছে। চারদিকে এত মায়াবী আলো, এত মোহনীয় আলোড়ন—দেখে মনখারাপের টনটনে ব্যথাগুলো মুহূর্তের মধ্যে দূর হয়ে গেল। খুশির ছটায় ঝলমলিয়ে উঠল দেহমন। যাপনের খেরোখাতায় জীবনের দাঁড়িকমার যে হিসাব মনে মনে কষছিলাম, সেগুলোকে ছড়িয়ে দিলাম জোনাকির আলোয়, ঝিঁঝিঁর ডাকে, বাতাসের ডানায়।

মন্তব্য করুন

আরও লেখা :

  • ঢাকাবাসের এক বছর

    ঢাকাবাসের এক বছর

    আমার ঢাকাবাসের এক বছ...
  • যখন মাসের শেষ

    যখন মাসের শেষ

    মাসের বিশ তারিখের পর...
  • গুলিস্তানের পথমুখ

    গুলিস্তানের পথমুখ

    রামপুরা থেকে কদমতলি ...
  • আফালের দিনে

    আফালের দিনে

    রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের ন...
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান