Skip to content
মুজিব হাসান
Menu
  • মুখপাতা
  • চিন্তানুড়ি
  • গদ্যলেখা
  • স্মৃতিকথা
  • জীবনপাঠ
  • গল্পগুচ্ছ
  • ধারাবাহিক
    • উপন্যাস
    • ভ্রমণগদ্য
  • আলাপঘর
    • মুখোমুখি
    • মুখাড্ডা
  • দেরাজ
    • পাণ্ডুলিপি
    • পাঠানুভূতি
    • চিঠিপত্র
  • খোলা বই
  • বিশেষ আয়োজন
Menu

সীমার খাল রহস্য

পোস্ট করা হয়েছে জুলাই ২৯, ২০২৫ by মুজিব হাসান

তেরো বছর আগের একদিন।

কার্তিকের সন্ধ্যা। সূর্য ডোবার সাথে সাথে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে দ্বীপপুর গ্রাম। ঘরে ঘরে জ্বলে উঠেছে হারিকেন আর কুপিবাতি। কিছুক্ষণ হলো মাগরিবের নামাজ শেষ হয়েছে। এই গ্রামের লোকজন সন্ধ্যা নামতেই ঘরে ফিরে আসে। গোধূলি লগ্নে মাঠ থেকে গরু-মহিষের পাল নিয়ে রাখালেরা গোয়ালে ফেরে। ধানিজমিতে হালচাষ শেষ করে কৃষকেরা চলে আসে বাড়িতে। দূর পাল্লার ট্রলার আর পারাপারের নৌকাগুলো নোঙর করে নদীর ঘাটে। বিকেলে খেলার মাঠে ছেলেপুলেরা মেলা জমায়। কেউ কাবাডি, কেউ গোল্লাছুট, কেউ আবার ক্রিকেট খেলে। মাগরিবের আজান হলে খেলাধুলার পাট চুকিয়ে তারা ফিরে আসে নিজ নিজ ঘরে। হাতমুখ ধুয়ে বই নিয়ে পড়তে বসে।

আজকের সন্ধ্যাটি আশ্চর্য নিবিড়। অন্ধকার ঘনিয়ে আসায় কেউ আর বাইরে নেই। সবাই ঘরের কোণে কিংবা বাড়ির উঠানে নিজেদের জীবনগল্পে মগ্ন। এমন সময় গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটতে থাকে দুটি ছেলে। ওরা যাবে উত্তরের মাঠে। ওই মাঠের মাঝখানে নদীর পেট কেটে বয়ে এসেছে একটি খাল। লোকেরা বলে সীমার খাল। কার্তিকের এ সময়টায় ওখানে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। তখন হাওড়ের পানি শুকিয়ে আসে। ছয় মাস ধরে বিশাল হাওড়ের অভয়ারণ্যে ছোটাছুটি করা মাছের ঝাঁক আটকা পড়ে নদীনালা আর খালবিলে। গ্রামের লোকজন একে বলে ‘মাছের মাইর’। এ নেশা ওদেরকে ভর সন্ধ্যায় ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছে সীমার খালের দিকে।

গ্রামের শেষ মাথায় তিন রাস্তার মোড়। মেঠোপথটি এখানে এসে দুটো বাঁক নিয়েছে। একটি পথ চলে গেছে নদীর দিকে, আরেকটি উত্তরের মাঠে। ওই পথ ধরে কিছু দূর গেলে সামনে পড়ে একটা বিশাল হিজল গাছ। গাছটা বেশ বয়সী; তিন প্রজন্মের সাক্ষী। দিনের বেলায় লোকজন তার ছায়ায় বিশ্রাম নেয়, কিন্তু রাতের বেলায় ভুলেও কেউ গাছটার ছায়া মাড়ায় না। লোকেরা বলাবলি করে, সন্ধ্যার পর থেকে নাকি গাছটা নড়াচড়া শুরু করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে তার নড়াচড়া। একসময় জীবন্ত হয়ে মাঠজুড়ে ছোটাছুটি করে আর মানুষের মতো ডাকতে থাকে। তখন যদি কেউ গাছটার সামনে পড়ে কিংবা তার ডাকে সাড়া দেয়, তাহলে তার জীবনে ঘোর বিপদ।

গ্রাম ছাড়িয়ে তিন রাস্তার মোড় পেরিয়ে ছেলেদুটি হাঁটছে। দুজনের হাতে দুটো পাওয়ারি টর্চ লাইট। আলো ফেললে অনেক দূরের জিনিসও স্পষ্ট চোখে পড়ছে। আরেক হাতে একটি করে কোঁচ। রাতের বেলায় কোঁচ দিয়ে মাছ ধরতে বেশ সুবিধা। কোমরে বাঁধা একটি করে চুপড়ি। ধরা মাছগুলো চুপড়িতে নিরাপদ থাকে। এগুলো নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে পথ চলছে ওরা। সামনেই হিজল গাছটা। ছড়ানো ডালপালা আর পাতার ঝাড় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিঃসঙ্গ। অন্ধকারে মনে হচ্ছে, বিশালকায় কোনো দৈত্য যেন ওদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে আছে।

ছেলেদুটি হাঁটতে হাঁটতে গাছটার কাছাকাছি চলে এলো। তখনই একজনের পেশাবের বেগ চাপল। ও সাথিকে ডেকে উঠল, ‘অই জুয়েল, একটু খাড়া। আমার মুতে ধরছে। মুইত্তে লই!’

জুয়েল দাঁড়িয়ে পড়ল। ওর সাথি এগিয়ে গেল সামনে। নিজেকে আড়াল করে পেশাব করতে বসল। অমনি জুয়েল আঁতকে উঠে ডাক পাড়ল, ‘অই মনির, তুই দেখা যায় হিজল গাছটার সামনে মুত্তে বইছস। জায়গাটা কইতাছি দোষী। জলদি সইরে আয়!’

মনির খেঁকিয়ে উঠল, ‘রাখ তোর দোষী জায়গা! খাড়া একটু, মুইত্তে আইতাছি।’

পেশাব শেষ করে মনির উঠে দাঁড়াল। অন্ধকারে হিজল গাছটার দিকে তাকিয়ে কিছু একটার নড়াচড়া টের পেল। সাথে সাথে টর্চের আলো ফেলল ওদিকে। অবাক চোখে দেখল, একটি দাঁড়কাক এডাল থেকে ওডালে ওড়াওড়ি করছে। এটা দেখে সাথিকে ডাক দিল, ‘অই জুয়েল, দেখ অইটা কী!’

টর্চের আলো ওদিকে ফেলে জুয়েল চমকে উঠল, ‘ওরে আল্লাহ, কী বড় দোরা কাউয়া!’

জুয়েলের চমকে ওঠা দেখে মনির মজা করে বলল, ‘কাউয়া না, অইটা জিন। দেখতাছস না কী কালা আর কেমনে চায়া রইছে!’

‘ইয়ার্কি মারিস না। কইতাছি জায়গাটা দোষী। এই গাছটাতে সত্যি সত্যিই জিন আছে। সবাই এইটা কয়।’ মনিরকে সাবধান করে দিল জুয়েল।

মনির এ কথাটি মোটেও আমলে নিল না, ‘আরে রাখ এইসব কথা। মানুষ তো কত হাছামিছাই কয়। এইগুলা শুইনা ডরাইলে চলব না।’

‘তাইলে এখন কী করবি? মাছ মারতে যাবি না?’

‘হ, যামু। খাড়া একটু, দেইখা লই কাউয়াটা কী করে।’

মনির আর জুয়েল অপার কৌতূহল নিয়ে দেখতে লাগল কাকটিকে। মোটা শরীর, ভারী পাখা, লম্বা ঠোঁট, ধারালো নখ আর মার্বেলের মতো চোখ। এমন দাঁড়কাক সচরাচর চোখে পড়ে না। পাতার ঝাড় কাঁপিয়ে এডাল থেকে ওডালে ওড়াওড়ি করছে। চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে টর্চের আলোর দিকে। ঘাড় উঁচু করে গম্ভীর স্বরে ডেকে উঠছে—‘কা কা কা!’

মনিরের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেল। ও নিচু হয়ে মাটির একটি ঢেলা তুলে নিল হাতে। কাকটির দিকে এটি তাক করে জুয়েলকে বলল, ‘দেখ চায়া, আমি জিনটারে কেমনে খেদাই!’

বলে গায়ের জোরে ঢিল মারল। ওর হাতের নিশানা অব্যর্থ। ঢিলটি গিয়ে সরাসরি কাকটির মাথায় লাগল। অমনি চারপাশ কাঁপিয়ে ভয়ানক স্বরে ডেকে উঠল দাঁড়কাকটি—‘কা কা কা!’

তক্ষুনি গাছের ডাল ছেড়ে উড়াল দিয়ে মিশে গেল অন্ধকারে। এটা দেখে মনির হাসিতে ফেটে পড়ল, ‘হা হা হা! দেখছস, জিনটারে কেমনে খেদাইছি?’

জুয়েল প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ওর হাত ধরে বলল, ‘অ আল্লা, তুই এইটা কী করছস!’

‘জিন মারসি। চল যাই, এইবার মাছ মারি গা!’

মনির তাড়া দিয়ে হাঁটা শুরু করল। জুয়েল একবার ভয়ার্ত চোখে গাছটার দিকে তাকিয়ে ওর পিছু ধরল। হাঁটতে হাঁটতে ওরা এগিয়ে যেতে লাগল সীমার খালের দিকে। তখন যদি ওদের কেউ পেছনে ফিরে তাকাত, তাহলে দেখতে পেত—হিজল গাছটাকে ঘিরে বইছে প্রচণ্ড ঘূর্ণি হাওয়া। হাওয়ার তোড়ে গাছটার ডালপালা আর পাতার ঝাড়গুলো প্রবলভাবে নড়াচড়া করছে। এর ভেতর দিয়ে ভয়ানক স্বরে ডাকতে ডাকতে ফিরে এসেছে দাঁড়কাকটি। গাছের ডালে বসে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। তার চোখদুটো ভীষণ লাল। অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে।

মনির আর জুয়েল হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে সীমার খালের পাড়ে। লম্বায় দুই মাইল আর চওড়ায় নদীর অর্ধেক এই খাল। জংলা হাওড়ের মাঝখানে এর অবস্থান। খালটা দ্বীপপুর আর বাদলপুর গ্রামের মাঝে সীমানা টেনেছে। ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, এটা খালের মধ্যভাগ। নদীর পেট কেটে বয়ে আসা খাল এখানে এসে ধনুকের মতো বাঁক নিয়েছে। এই বাঁক ধরে এক মাইল পশ্চিমে গেলে মিলবে ধনু নদীর দেখা। দিনমান তাতে চলাচল করে ডিঙি, ট্রলার, লঞ্চ, কার্গো ও স্টিল বডির নৌকা। আর এক মাইল উত্তরে এগোলে চোখে পড়বে হাতিমারা বাঁধ। দ্বীপপুর থেকে আসা মেঠোপথটি বাঁধের ওপর দিয়ে চলে গেছে বাদলপুর। দুই গ্রামের লোকজন এই পথে যাওয়া-আসা করে।

হাতিমারা বাঁধের পূবদিকে গলাকাটা জংলা। আধা মাইলজুড়ে বিস্তৃত হিজল বন। শুকনাকালে পুরোটা নল-খাগড়ার ঝোপঝাড়ে ছেয়ে যায় আর বর্ষাকালে শ্যাওলা পানিতে ভাসমান থাকে। জায়গাটা নামের মতোই ভয়ানক। লোকেরা বলাবলি করে, এই জংলায় নাকি মান্ধাতা আমলের একটা হিজল গাছ আছে, যেটা মানুষের ঘাড় মটকে দেয়। এই কাজে তাকে সহায়তা করে তিন রাস্তার মোড়ের হিজল গাছটা। রাতবিরাতে কেউ জংলার দিকে গেলে এই গাছটা ওই গাছটাকে সংকেত পাঠায়। তখন ওই হিজল গাছটা লতানো ডালপালায় তার গলা পেঁচিয়ে ধরে ভেতরে টেনে নেয়, তারপর ঘাড় মটকে মেরে ফেলে। এজন্য রাতের বেলায় ওদিকে যাওয়া নিষেধ।

মনির আর জুয়েল পাড়ে দাঁড়িয়ে খালের পানিতে টর্চ ফেলল। খালে এখন ভাটা চলছে। পাড়ের তিন হাত নিচে নেমে গেছে পানি। ওপরে উঠে এসেছে থিকথিকে কাদা। এখনই মাছ ধরার মোক্ষম সময়। টর্চের আলোয় চকচক করে উঠল কাদা পানিতে আটকে থাকা তরতাজা সব মাছ—পুঁটি, টেংরা, বেলে, টাকি, কই, ভেদা, শিং, মাগুর, কাকিলা, চাপিলা, বাইম, চিকরা। এত রকম মাছ দেখে জুয়েলের চোখ জুলজুল করে উঠল। কোঁচ ব্যবহার না করে খালি হাতেই এগুলো ধরে চুপড়ি ভরে নেওয়া যাবে। এই ভেবে ও মনিরকে তাড়া দিল, ‘দোস্ত, দেখছস কত্ত মাছ! চল, জলদি নাইমা পড়ি!’

জুয়েলের এ কথায় মনির ওর মুখের ওপর টর্চ ফেলে তিরস্কার করল, ‘তুই একটা আস্তা বেক্কল! আমরা কি এইসব গুরা মাছ মারার লাগিন আইছি?’

জুয়েল একটু অবাক হয়ে বলল, ‘তাইলে কী মাছ মারবি?’

‘বড় বড় মাছ মারমু। বোয়াল, বাঘাইর, রুই, কাতলা এইগুলা ধরমু!’

‘তাইলে তো জংলার দিকে যাওয়া লাগব।’

‘হ, চল অইদিকেই যাই!’

জুয়েল এবার আঁতকে ওঠে বলল, ‘কী কইতাছস তুই, অইদিকে ভুলেও যাওয়া যাইব না! জায়গাটা যে দোষী, তুই জানস না এইটা?’

মনির খেঁকিয়ে উঠল, ‘আরে বেক্কল, তুই অত ডরাইতাছস ক্যান? আমি তো আছি। দেখছস না, একটু আগেই একটা জিন মাইরা আইছি!’

জুয়েল চুপচাপ কাদা পানিতে আটকে থাকা মাছগুলো দেখছে। এখানে মাছ ধরলে মুহূর্তেই চুপড়ি ভরে যাবে। তাহলে কেন বড় মাছ ধরতে গিয়ে শুধু শুধু কষ্ট করবে? এই ভেবে মনিরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘নাহ, আমি গুরা মাছই ধরমু। তুই গিয়া বড় মাছ ধর গা! তোর সাথে আমি নাই!’

জুয়েল রাগ করেছে বুঝতে পেরে মনির ওর হাত ধরল, ‘দোস্ত, আমি তোরে গুরা মাছ মাইরা দিমু। চল যাই, বেশি দূরে যামু না। অইদিকে একটু দেইখা চইলা আসমু।’

এ কথায় জুয়েল আবারও অনিচ্ছা প্রকাশ করল। কিন্তু মনির বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে ওকে পীড়াপীড়ি করতে লাগল। শেষমেশ ও রাজি হয়ে গেল, ‘আইচ্ছা, চল যাই!’

মনির আর জুয়েল খালের পাড় ধরে গলাকাটা জংলার দিকে হাঁটছে। এক হাতে টর্চ টিপে আলো ফেলছে, আরেক হাতে তাক করে ধরেছে কোঁচটি। জুয়েল একটু ভীতু প্রকৃতির আর মনির দুরন্ত সাহসী। কিন্তু দুজনেই দক্ষ মাছ শিকারী; একেবারে মাছের পোকা। কোনো মাছ যদি ওদের দৃষ্টির আওতায় চলে আসে, তাহলে কোঁচের ঘা খেয়ে কুপোকাত হবেই।

মনির আগে চলছে, তার পেছনে আসছে জুয়েল। দুজনে অনুসন্ধানী দৃষ্টি ফেলছে কাদা পানিতে। মাছের নেশায় ওরা এতটা মত্ত, কখন যে বাঁধ পেরিয়ে জংলার কাছাকাছি চলে এসেছে, সে খেয়াল নেই। হঠাৎ এক জায়গায় কিছু একটার নড়াচড়া টের পেল। আলো ফেলতেই দেখা গেল, সেখান থেকে বুদ্বুদ উঠছে। দেখে মনির থেমে গিয়ে জুয়েলকে থামতে ইশারা করল।

জুয়েল কৌতূহল নিয়ে বলে উঠল, ‘অই মনির, কী হইছে?’

মনির নিচু স্বরে বলল, ‘কথা কইস না। অইখানে একটা বড় মাছ লড়তাছে।’

বলেই দু-পা এগিয়ে গাঁয়ের জোরে কোঁচ দিয়ে মারল এক ঘা। কোঁচটি ঠিক জায়গায় পড়ল। সাথে সাথে কাদা পানি থেকে লাফিয়ে উঠল একটা রাঘব বোয়াল। কোঁচের ঘায়ে কুপোকাত হয়েছে মাছটা। আহত হয়ে আছড়ে পড়ল পানিতে। লেজ নাড়িয়ে আরও ঘোলে করে তুলল পানি।

মনির খুশিতে ডগমগিয়ে উঠল, ‘হুররে, মাছটারে বাজায়া ফেলছি!’

জুয়েল আনন্দিত হয়ে বলল, ‘দোস্ত, তুই খাড়া, আমি গিয়া মাছটা ধরতাছি।’

হাতের জিনিসগুলো রেখে ও কাদা পানিতে নেমে পড়ল। মাছটা যেখানে পড়ে নড়াচড়া করছে, সেখানে গিয়ে কোঁচ ধরে টান দিল। অমনি আবারও লাফিয়ে উঠল মাছটা। এবার শরীর থেকে কোঁচটি বেরিয়ে এলো আর মাছটা কাতরাতে কাতরাতে চলে গেল গভীর পানিতে।

মনির খেঁকিয়ে উঠল, ‘অই বেক্কল, তুই এইটা কী করছস! মাছটা ছুইটা গেছে, জলদি ধর!’

নামতে নামতে সাঁতার পানিতে চলে গেল জুয়েল। মাছটার নাগাল পেল না। ডুব দিতে গিয়ে টের পেল, কী যেন একটা ওর পা পেঁচিয়ে ধরেছে। এটা ওকে টেনে নিচ্ছে পানির নিচে। জুয়েল ভয়ার্ত গলায় ডেকে উঠল, ‘অ আল্লারে, অই মনির, আমারে ধর! আমার পাওয়ে ধইরা কী জানি টানতাছে!’

জুয়েল মাছটা ধরতে পারেনি দেখে মনির ওর প্রতি প্রচণ্ড রেগে আছে। ভাবছে, ওর তিরস্কার থেকে বাঁচতে জুয়েল এই কাণ্ড করছে। তাই পাড়ে থেকেই ক্ষুব্ধ গলায় বলে উঠল, ‘অই, ভং করবি না কইতাছি। মাছটা ধরতে পারস নাই, এখন আবার নাটক করতাছস!’

জুয়েল এবার প্রাণপণে চিৎকার করে উঠল, ‘আল্লারে, আমারে বাঁচাও! আমারে বাঁচাও!’

বলে দুহাত নাড়তে নাড়তে তলিয়ে গেল খালের পানিতে।

এবার মনিরের টনক নড়ে উঠল, ‘অই জুয়েল, কী হইছে তোর! কী হইছে!’

বলতে বলতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল। জুয়েল যেখানে তলিয়েছে, ওখানে গিয়ে ডুব দিল। সাথে সাথে টের পেল, কী যেন একটার সাথে ওর পা আটকে যাচ্ছে। সেটাতে সজোরে এক লাথি দিয়ে ও ভেসে উঠল পানির ওপরে। কাদা পানি মাড়িয়ে পাড়ে ওঠে হাঁপাতে লাগল।

মনিরের চারপাশে অমাবস্যার চেয়ে গাঢ় অন্ধকার নেমে এলো। ওরা ভীষণ বিপদে পড়েছে আর জুয়েলের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে, এটা বুঝতে পেরে মনির ডুকরে কেঁদে উঠল, ‘অ আল্লারে, কী হইল এইটা! অই জুয়েল, তুই কই গেলি? কী হইল তোর?’

কাদা পানিতে মাখামাখি হয়ে খালের পাড়ে বসে কান্না করছে মনির। এমন সময় দেখতে পেল, গলাকাটা জংলা থেকে একটা বিশাল দাঁড়কাকের ঝাঁক পঙ্খিরাজ সাপের মতো আঁকিবুঁকি কেটে ওর দিকে উড়ে আসছে। কাছে এসে কাকগুলো মাথার ওপরে চক্রাকারে ঘুরছে আর ভয়ানক তারস্বরে কা কা করে ডাকছে। সবগুলো কাকের চোখ ভীষণ লাল। অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে।

মনির এবার কান্না ভুলে পাগলের মতো কাক তাড়াতে লাগল, ‘হইশ কাউয়া, হইশ!’

ভয়ের চোটে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল মনির।

[এখানে আরেকটু যোগ হবে।]

মন্তব্য করুন
শেয়ার করুন
Amar Kotha

আমি মুজিব হাসান। আমার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হাওড় এলাকার এক কৃষক পরিবারে। দিনটি ছিল ১৩ বোশেখ—নতুন ফসল ঘরে তোলার আমেজময় সময়। বাপদাদার পেশা হাওড়ের চাষাবাদ আর গাঙের জলমহাল। আমার ইচ্ছা লেখালেখিকে নিজের পেশা হিসেবে বরণ করে নেব। এ দেশে কলমকারি করে জীবিকা নির্বাহ করা যদিও বেশ কঠিন কাজ, তবুও এ ইচ্ছা জিইয়ে রাখব।

পড়াশোনার পুরোটা কওমি মাদরাসায়। জামিয়া ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ থেকে দাওরায়ে হাদিস, এরপর জামেয়া দারুল মাআরিফ চট্টগ্রামে আরবি সাহিত্য পড়েছি। করোনা মহামারির সময়টায় শুরু করেছি কর্মজীবন। প্রকাশনায় কাজের ইচ্ছা থেকে বর্তমানে সম্পাদনার কাজবাজ করছি। এছাড়া নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো এখনো কোনো পাটাতন তৈরি করতে পারিনি।

হাওড়ের জীবন, প্রকৃতি ও মানুষ দেখে জেগেছে আমার লেখালেখির বোধ। জীবনের প্রথম রচনা একটি খুদেগল্প—লিখেছিলাম মক্তব সুওমে পড়ার সময়। মক্তব পাঞ্জম থেকে শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ডায়েরি আর ছড়া-কবিতা ছিল আমার নিত্য কলমকারি। হেদায়াতুন্নাহু জামাতে পড়ার সময় গল্প-উপন্যাস রচনায় হাত দিই। এক খাতায় এক বসাতে লিখতাম আস্ত উপন্যাস!

স্কুল-মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো আমার সাহিত্য পাঠের প্রথম জোগান। শহুরে পরিবেশে এসে বই পড়ার দিগন্ত আরও প্রসারিত হলো। মাদরাসার সাহিত্য পাঠাগার, পাবলিক লাইব্রেরি, বইয়ের দোকানে ছিল নিত্য যাতায়াত। গল্প-উপন্যাস পড়তে বেশি ভালো লাগে। কবিতা আমার অবসরের সঙ্গী। কুরআনের তাফসির ও জীবনী সাহিত্য বেশ টানে। খুব রয়েসয়ে পাঠ করি চিন্তামূলক রচনাগুলো।

পৃথিবীর বুকে আমি একটি নুক্তা কিংবা নুড়ি। বয়স ও সময়ের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। চিহ্নপত্রে নিজেকে নিয়ে বলার মতো এটুকুই কথা। বাকি সব বকওয়াজ।

ফেসবুকে আমি

এটা আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোনো লেখা বা ছবি কপি করা অন্যায়ের অন্তর্ভুক্ত।

<
.

নিয়মিত আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

© ২০২৫ মুজিব হাসান