জলধোয়া আয়নার মতো শরতের মেঘমেদুর আকাশ। দিনঘড়ি হয়ে ঝুলে থাকা সূর্যটা ঢলে পড়েছে পশ্চিম দিগন্তে। সোনাঝরা রোদের ঘূর্ণায়মান কাঁটায় জানান দিচ্ছে বিকেলের বার্তা। দিনের এই ঋদ্ধ প্রহরকে সাক্ষী রেখে আমরা প্রবেশ করলাম টাউন হল প্রাঙ্গণের ইসলামি বইমেলায়। আমি আর খাইরুল ইসলাম, দুজনের প্রধান পরিচয় পড়ুয়া। বইমেলা লেখক-পাঠকের মিলনমেলা, এ ধারার লোকজন এখানে বেশি আসবে। আমাদের…
ডায়েরির দাগগুলো
আমি তখন পনেরো পেরোনো কিশোর। তাড়াইল সাচাইল মাদরাসায় নাহবেমির জামাতে পড়ি। লজিং থাকি মামার বাড়িতে। সকাল আটটায় খাবারের ছুটি হয়। প্রতিদিন বেরোনোর সময় হাতে করে একটি বই নিয়ে যাই। পড়ি আর হাঁটি; যাওয়া-আসার পুরোটা সময় ডুবে থাকি বইয়ের ভেতর। বিকেলে মামার দোকানে গিয়ে পত্রিকা পড়ি। রাতে ইশার পরে করি টুকটাক লেখালেখি। রোজনামচা লেখা হয় নিয়মিত।…
আনসারনগরে, পুণ্যস্মৃতির খোঁজে
শীতের সকাল। আকাশের জাফরি গলে চুঁইয়ে পড়ছে দইয়ের ঘোলের মতো কুয়াশা। ঝিরঝিরে বাতাস বয়ে আনছে বরফকুচির আর্দ্রকণা। এক চাকতি কমলালেবুর মতো সূর্য ছড়াচ্ছে কুসুম রোদ। প্রকৃতির এরকম দৃশ্যপট দেখতে দেখতে আমরা রওনা হলাম আনসারনগরের উদ্দেশে। বাংলার সিরাত সাহিত্যের জনক মাওলানা মুহিউদ্দীন খান রহ.-এর আনসারনগরে, তার পুণ্যস্মৃতির খোঁজে। মাওলানা খানকে আমি চিনেছি তার সাড়াজাগানো আত্মজীবনী ‘জীবনের…
পাঠ্যবইয়ের আমোদ
বই পড়া নিয়ে যখন স্মৃতি রোমন্থন করি, মনের গহিন থেকে উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে উঠে আসে ‘শিশুছন্দ’ বইটির কথা। আমাদের বাল্যশিক্ষার সময়ে এটি ছিল মাদরাসার শিশু শ্রেণির পাঠ্য। এই বই থেকে নিয়েছি ছন্দোময় নীতিকথায় বাংলা বর্ণপরিচয়ের আমোদিত পাঠ। পড়ার সময় নীতিকথার পঙক্তিগুলো মনে খুব দাগ কাটত, ছন্দের দোলা জাগিয়ে তোলত অপূর্ব মোহন। প্রতিটি বর্ণ ও বাক্যে…
যে স্মৃতি জল-বাতাসার
মাদরাসাজীবন। জীবনের খেলাঘরে সুখের বারান্দা। কারও চৌদ্দ বছর, কারও দেড় যুগ, কারও-বা আরও বেশি—আমরা বাস করি এই ঘরে, সংসার পাতি সুখের বারান্দায়। ফালি ফালি রোদ, টুকরো টুকরো ছায়া—মায়াময় এক সোনালি সংসার। মাথার ওপর ঝলমলে চাদোয়া। সেখানে জমা হয় যাপিত জীবনের নানারঙা স্মৃতি। সুখ-দুখের কানাকড়ি, হাসি-কান্নার হিরেপান্না, আনন্দ-বেদনার বর্ণিল গাথা। স্মৃতির ঝালর লাগানো রঙিন মখমলে দিন—যা…
ঘায়েল বান্ধার দিন
আমাদের হাওড় এলাকায় বর্ষাকাল শুরু হয় সময়ের একটু আগে; জষ্টি মাসের মাঝামাঝিতে। কোনো বছর বর্ষা আসে ঠিক সময়ে—আষাঢ় মাসে, আবার কোনো বছর এসে যায় অনেকটা আগেভাগে—বোশেখ মাসের মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে। তা যেভাবেই আসুক, বর্ষার মরসুমটি কিন্তু হাওড় এলাকার জনজীবনে বিরাট প্রভাব ফেলে। শুকনা আর বর্ষা—হাওড়ের ঋতু হিসেবে এ দুটোকে ধরা হয়। শুকনা মরসুমে সমস্ত…
মায়াময় ভিটেবাড়ি
নদীর ভাঙনে হারালাম চৌদ্দপুরুষের বসতবাড়ি। শিমুলবাঁক গ্রাম ছেড়ে আমরা চলে এলাম এপারে—নতুন জায়গায়, নতুন বাড়িতে। এখানে এসে আমাদের ছোটদের আনন্দ আর ধরে না। চারদিকের পরিবেশটা কী সুন্দর! দুদিকে দুটো গাং। উত্তরে ঘোড়াউত্রা, অনেকটা মরামতো; দক্ষিণে ধনু, স্রোতময় ঢেউখেলানো। মাঝখানে উর্বর ভূমির একখণ্ড চর। ঘাসফড়িংয়ের মাঠ, সোঁদা মাটির পথ, ধান-বাদাম আর মাষকলাইয়ের খেত। রুপোর ফিতের মতো…
ফেলে আসা জন্মভিটে
বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গাং দেখছিলাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্বচ্ছ পানির ঢেউখেলানো এই নাব্য গাং; নাম তার ধনু—ময়মনসিংহ গীতিকায় যার বর্ণনা আছে। দিনমান তাতে চলাচল করে ডিঙি নাও, ট্রলার, লঞ্চ-কার্গো আর স্টিল বডির নৌকা। বাড়ির পেছনে দাঁড়ালে এ সব দেখা যায়। এমনকি ঘরে বসে শোনা যায় ট্রলারের ভটভট শব্দ আর লঞ্চ-কার্গোর দূরবর্তী সংকেত।…